একটু অসচেতন হলেই বর্ষার এই ৬ রোগ আপনাকে বিছানায় ফেলতে পারে

বর্ষা ঋতু আমাদের সবার জন্য একদিকে যেমন আরামদায়ক, তেমনি অন্যদিকে এটি বিভিন্ন ধরনের রোগবালাইয়ের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। বৃষ্টি ও ভিজে আবহাওয়া আমাদের শরীরে নানা রোগের সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এই সময়ে অসচেতন হলে সহজেই কিছু সাধারণ রোগ আপনাকে বিছানায় ফেলতে পারে। এই ব্লগে আমরা আলোচনা করবো বর্ষার ৬টি সাধারণ রোগ এবং সেগুলি থেকে বাঁচার উপায়।

১. ডেঙ্গু

ডেঙ্গু একটি মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগ যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। বর্ষার সময়ে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার প্রজনন বৃদ্ধি পায়, যার ফলে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বাড়ে। ডেঙ্গু জ্বরের প্রধান লক্ষণগুলি হল উচ্চ জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা, পেশী ও গাঁটের ব্যথা, এবং ত্বকের র‍্যাশ।

প্রতিরোধের উপায়:

  • ঘরের চারপাশে জল জমতে দেবেন না।
  • নিয়মিত মশার প্রতিরোধক ব্যবহার করুন।
  • মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য মশারি বা লম্বা পোশাক পরুন।
  • মশার প্রজনন স্থলগুলি নিয়মিত পরিষ্কার করুন।

২. ম্যালেরিয়া

ম্যালেরিয়া হল আরেকটি মশাবাহিত রোগ যা বর্ষার সময় বেশি দেখা যায়। প্লাসমোডিয়াম প্যারাসাইট দ্বারা সংক্রমিত মশা ম্যালেরিয়া ছড়ায়। ম্যালেরিয়ার প্রধান লক্ষণগুলি হল উচ্চ জ্বর, শীতল ঠাণ্ডা, ঘাম, এবং তীব্র মাথাব্যথা।

প্রতিরোধের উপায়:

  • মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য মশারি বা মশার প্রতিরোধক ব্যবহার করুন।
  • মশার প্রজননস্থলগুলি নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
  • প্রয়োজন হলে অ্যান্টি-ম্যালেরিয়া ওষুধ গ্রহণ করুন।

৩. টাইফয়েড

টাইফয়েড একটি ব্যাকটেরিয়াল রোগ যা প্রধানত দূষিত খাবার এবং পানির মাধ্যমে ছড়ায়। বর্ষাকালে খাদ্য এবং পানীয়ের দূষণ বাড়ে, যার ফলে টাইফয়েডের ঝুঁকি বেশি থাকে। টাইফয়েডের লক্ষণগুলি হল উচ্চ জ্বর, পেটের ব্যথা, মাথাব্যথা, এবং দুর্বলতা।

প্রতিরোধের উপায়:

  • বিশুদ্ধ পানি পান করুন এবং খাদ্য তৈরি ও গ্রহণের সময় পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
  • রাস্তায় বিক্রি হওয়া খাবার এবং পানীয় এড়িয়ে চলুন।
  • টাইফয়েডের টিকা নিন।

৪. কলেরা

কলেরা একটি তীব্র ডায়রিয়ার রোগ যা দূষিত পানি এবং খাদ্যের মাধ্যমে ছড়ায়। বর্ষাকালে বন্যা এবং জলাবদ্ধতার ফলে পানি দূষিত হতে পারে, যা কলেরার ঝুঁকি বাড়ায়। কলেরার প্রধান লক্ষণগুলি হল তীব্র ডায়রিয়া, বমি, এবং ডিহাইড্রেশন।

প্রতিরোধের উপায়:

  • শুধুমাত্র বিশুদ্ধ পানি পান করুন।
  • খাবারের সময় এবং পরেও হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
  • রাস্তায় বিক্রি হওয়া খাদ্য এবং পানীয় থেকে দূরে থাকুন।

৫. ভাইরাল ফিভার

বর্ষাকালে বিভিন্ন ভাইরাল ফিভারের প্রকোপ বাড়ে। ভাইরাল ফিভার সাধারণত ফ্লু-এর মতো লক্ষণ সৃষ্টি করে, যেমন হালকা থেকে মাঝারি জ্বর, মাথাব্যথা, সর্দি, কাশি, এবং গলা ব্যথা। এই সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে ভাইরাল ফিভারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

প্রতিরোধের উপায়:

  • জনসমাগম থেকে দূরে থাকুন।
  • সঠিকভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
  • সর্দি, কাশি হলে মাস্ক পরুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৬. লেপটোস্পাইরোসিস

লেপটোস্পাইরোসিস হল একটি ব্যাকটেরিয়াল রোগ যা প্রধানত বর্ষার সময়ে ঘটে। জলাবদ্ধ জলে উপস্থিত লেপ্টোস্পাইরা ব্যাকটেরিয়া ক্ষতস্থানের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। লেপটোস্পাইরোসিসের প্রধান লক্ষণগুলি হল উচ্চ জ্বর, মাথাব্যথা, পেশী ব্যথা, এবং চোখ লাল হয়ে যাওয়া।

প্রতিরোধের উপায়:

  • জলাবদ্ধ জলে হাঁটার সময় রাবারের বুট পরুন।
  • জলাবদ্ধ স্থান থেকে দূরে থাকুন।
  • ক্ষতস্থানে সঠিকভাবে ড্রেসিং করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

বর্ষা ঋতুতে রোগবালাইয়ের ঝুঁকি বাড়ে, তবে একটু সচেতন থাকলেই আপনি এইসব রোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন। নিজের এবং পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে সঠিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন, বিশুদ্ধ পানি ও খাবার গ্রহণ করুন, এবং প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বর্ষার সময় সতর্ক থাকুন এবং সুস্থ থাকুন।